Translate

Saturday, July 16, 2016

মানবিক ???

জিতেশ ভট্টাচার্য
=========
মানুষ প্রকৃতপক্ষে একটি শ্রান্তিহীন লড়াকু প্রজাতি এবং লড়াই, হানাহানি ছাড়া সে জীবনধারণ করিতে পারে না। এই যুযুধান প্রবৃত্তি তাহার মজ্জাগত এবং জীবনশৈলীর এক অম্লজানসদৃশ উপাদান। কোন ধর্ম বা দর্শন যেমন আমাদের দেহের কোষবিভাজন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন সাধন করিতে পারে না, তেমনি পারে না এই প্রবৃত্তি দূর করিতে।হিন্দু-মুসলমান, শিয়া-সুন্নি, শাক্ত-শৈব, বাউল-সুফি, বাঙালী-অবাঙালী, ভারতীয়-বাংলাদেশী, রবীন্দ্রপ্রেমী-নজরুলপ্রেমী, মোহনবাগান-ইষ্টবেঙ্গল, সেক্যুলার-কম্যুন্যাল,আমিষভোজী-নিরামিষাশী, কবি-অকবি, খেয়ালগায়ক-‘র‍্যাপ’গায়ক জাতীয় বহুবিধ বিষয় লইয়া তাহারা অবিরাম লড়িতেছে। একদল যদি ‘ইসলামিক’ সন্ত্রাসবাদের ধুয়া তুলে, ত অন্যদল ‘খাপ’ পঞ্চায়েত টানিয়া আনে এবং অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে একে অপরের বাপান্ত করিতে থাকে। আপন আপন তথাকথিত ‘ধর্ম’ হইতে সমর্থনসূচক ভুরি ভুরি উদ্ধৃতি লইয়া তাহারা প্রমাণ করিতে চাহে যে এই মহাবিশ্বে তাহারাই মানবতার একমাত্র ঠিকাদার এবং বাকী সকলেই শয়তানের চর। যেহেতু আমরা সকলেই ব্যাপক 'গণতন্ত্রপ্রেমী', তাই প্রত্যেকেরই অধিকার আছে নিজ বক্তব্য পেশ করিবার এবং বোধকরি হিংস্র পদ্ধতিতে যাহাকে বলে ‘হট্‌ পারস্যুইট্‌’, তাহা চালাইবার। এমতাবস্থায়, মাৎস্যন্যায়ের এই চিরস্থায়ী ‘সংস্কৃতি’তে শান্তিপ্রিয় সংখ্যালঘু জনতা কি আর করিতে পারে! তাহারা দিনগত পাপক্ষয় করিতে করিতে লড়াকু সম্প্রদায়সমূহের কোন একটির বলি হইবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করিতে থাকে এবং এই উত্তপ্ত চাটু হইতে উদ্ধারকারী দৈবিক শক্তির হস্তক্ষেপের আশা নামক মরীচিকার কল্পনায় জীবনযাত্রাকে অণুপরিমাণ হইলেও সহনীয় করিবার প্রয়াসী হয়। আবার কেহ কেহ সাময়িক নিরাপত্তা অথবা প্রাণের তাগিদে আন্তরিক তাড়নার বিপরীতে গিয়াও কোন একপক্ষে নাম লিখাইতে বাধ্য হয় এবং নিজের আত্মাটিকে অন্যবিধ এক পীড়ণের বলি চড়ায়।

No comments:

Post a Comment